ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

চকরিয়ায় দুর্ঘটনায় হতাহত সাত ভাই-বোনের ছোট প্লাবন

প্লাবনের এইচএসসি পাস, একটা চাকরি হলেই পরিবারের দুবেলা খাবার জুটবে

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :: সম্প্রতি কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপচাপায় একসঙ্গে নিহত পাঁচ ভাইয়ের পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ ভাইপ্লাবন শীল প্রাণে বেঁচে ফেরেন। তিনি ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫৮ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছেন তিনি। তার এই কৃতিত্বের খবর এ দুঃসময়ে পরিবারকে কিছুটা হলেও সান্তনা দিয়েছে। সদ্য এইচএসসি পাস করা প্লাবন ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও একের পর এক ভাইয়ের মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে গেছেন প্লাবন।

একপর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায় সে। পরে হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরইমধ্যে গত রবিবার তার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার আগে মালুমঘাটের প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে গেলে এই তথ্য পাওয়া যায়। এ সময় প্লাবনকে ঘিরে পরিবার সদস্য, স্বজন এবং প্রতিবেশীরা প্রশংসায় পঞ্চমূখ ছিলেন।

প্লাবনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে, পাস করেছেন কী-না? তখন ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে প্লাবন বলেন, ‘আমি পাস করেছি। ডুলাহাজারা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে আমি পড়েছি। ’ এরপর তখন অন্যমনস্ক হয়ে প্লাবন বলতে থাকেন, ‘আমার ভাই স্মরণ কোথায়? সে কখন আসবে। আমার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসবে না?

কনিষ্ঠ সন্তান প্লাবন শীল এইচএসসি পাস করায় ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বৃদ্ধা মা মৃণালিনী শীল বলেন, ‘অর্থ উপার্জনের সব ক্ষেত্র আমার শেষ হয়ে গেছে। এখন যদি আমার এই ছেলে প্লাবন ছোট একটা চাকরি পায় তাহলে অন্তত পরিবারের সকল সদস্যদের মুখে দু-বেলা অন্ন যোগাড় করতে পারবে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছেলের জন্য একটি চাকরি চাই। ’

তিনি আরো বলেন, ‘একসঙ্গে নিহত হওয়া পাঁচ ছেলের স্ত্রীরাও পড়ালেখা জানা। তারাও চাকরি করতে পারবে। যদি তাদেরও চাকরির ব্যবস্থা করা হয় তাহলে নাতিদের নিয়ে পরবর্তী জীবন ভালভাবে কাটাতে পারবে।’

প্লাবনের বাবা সুরেশ চন্দ্র শীল প্রয়াত হওয়ার দশদিনের মাথায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ির কাছে মহাসড়কের পাশে নির্জন স্থানে পারলৌকিক ক্রিয়ানুষ্ঠানের আচার হিসেবে ‘দণ্ডি’ দিয়ে বাড়ি ফেরার মুহূর্তে একসঙ্গে সাত ভাই-বোনকে চাপা দেয় ঘাতক পিকআপ। এ সময় প্লাবন এবং বোন মুন্নী শর্মা পেছনের দিকে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলে চার ভাই যথাক্রমে অনুপম শীল, নিরূপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মরণ শীল মারা যান। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন আরেক ভাই রক্তিম শীল এবং মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে বড় বোন হীরা শীল।

পাঠকের মতামত: